Skip to content

রত্ন পাথর ব্যবহার ও ভাগ্য গণনা করা কি হারাম?

এ পৃথিবীর সকল কিছু মহান আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন এবং সকল কিছুই তার ইচ্ছা মাফিক চলে থাকে। এ পৃথিবীতে কার কখন কি হবে তা একমাত্র মহান আল্লাহ্‌তালাই জানেন। তিনি না চাইলে যেমন কারো কিছুই হয়না আবার তিনি চাইলে কেও কোন কিছুই আটকে রাখতে পারেনা। ঠিক সেই জায়গা থেকে যখন একজন ব্যক্তি মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলে দেয় তখন সেটা আল্লাহ্‌র আগে বলে দেওয়ার শামিল আর যা স্পষ্ট ভাবে ইসলাম ধর্মে হারাম। ইসলাম ধর্মে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, যে ব্যক্তি ভাগ্য গননার জন্য গনককারের কাছে যাবে এবং ভাগ্য গণনা করবে, গনক কারের কথা বিশ্বাস করবে তার এবং গনক কারের পরবর্তী ৪০ দিনের এবাদত কবুল হবেনা। তাই সহজ কথায় ভাগ্য গণনা করা ইসলাম ধর্মে হারাম এবং গুনাহর কাজ।

রত্ন পাথর মহান আল্লাহ্‌র সৃষ্টি একটি নেয়ামত। নেয়ামত হিসেবে তিনিই পবিত্র কোরআন শরীফের ৫৫ নং সূরা “আর-রহমান” এর ১৮ থেকে ২৩ নম্বর আয়াতে তার ক্ষমতা বুঝাতে প্রবাল এবং মুক্তা পাথরের কথা উল্লেখ করেছেন এবং মানুষ ও জীন জাতির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন যে, আমরা মহান আল্লাহ্‌র কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবো? একই সূরায় ৫৪ থেকে ৫৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতালা বেহেস্তের হুরদের কথা বলতে গিয়ে ৫৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন তারা যেন এক একটি প্রবাল ও রুবি পাথরের ন্যায় এবং ৫৯ নং আয়াতে মানুষ ও জীন জাতির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন যে, আমরা মহান আল্লাহ্‌র কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবো? মহান আল্লাহ্‌ যেখানে রত্ন পাথরকে তার ক্ষমতা প্রকাশে নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেখানে আমরা মানুষ রত্ন পাথরকে খারাপ বলি কোন যুক্তিতে।

এবার আসি ভাগ্য বদলানোর চিন্তা করে রাশি রত্ন পাথর ব্যবহার করার দিকে। শিরিক করা মহা পাপ। শিরিক বলতে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ কাওকে তুলনা করা অথবা আল্লাহ্‌কে ছাড়া আর কারো উপর ভরসা করা বুঝায়। এখন কেও যদি মনে করেন যে রাশি রত্ন পাথর ব্যবহার করলে তার ভাগ্য বদলে দেবে, তাকে বিপদ থেকে বাঁচাবে, তার ব্যবসায় উন্নতি এনে দেবে অথবা পরিবারে শান্তি এনে দেবে তাহলে বিষয়টা সম্পূর্ণ শিরিক করা এবং এটা কবিরা গুনাহ। এমন কবিরা গুনাহ আমরা প্রতি নিয়ত করে চলেছি ওষুধ খাবার সময়ও। বাড়িতে কারো জ্বর হলে আমরা বলে দেই নাপা ওষুধ খাও জ্বর ভালো হয়ে যাবে। কারন নাপা কখনই কারো জ্বর ভালো করতে পারেনা, এমন কি কোন ওষুধই কোন অসুখ ভালো করতে পারেনা। যদি ওষুধই মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারতো তাহলে কোন মানুষ আর মারা যেত না। সুস্থ করার মালিক আল্লাহ্‌। তাই যদি আমরা ওষুধ খাবার সময় নিজে না ভাবি যে আল্লাহ্‌ চাইলে এ ওষুধ আমায় সুস্থ করবে, অথবা অন্যকে পরামর্শ দেবার সময় যদি না বলি যে ঐ ওষুধ খাও আল্লাহ্‌ চাইলে তুমি সুস্থ হতে পার তাহলেই সেটা আল্লাহ্‌র সাথে শিরিক করে শুধু ওষুধকে ক্ষমতা দেওয়া হয়, আর তখনি সেটা গুনাহ।

যদি আমরা ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে জানতে পারি আমাদের নবীজি একটি আকিক পাথর ব্যবহার করতেন তার সিল মহর হিসেবে, তার আকিক পাথরের তজবি ছিল। হযরত ওমর (রাঃ) তার হাতে পাথর ব্যবহার করেছেন। এমনকি ইমাম হাসান (রাঃ) ও ইমান হোসেন (রাঃ) এর জন্য বেহেস্তে পান্না পাথর ও রুবি পাথর দিয়ে প্রাসাদ তৈরি করেছেন মহান আল্লাহ্‌। ইমাম হাসান (রাঃ) এর জন্য লাল রুবি পাথরের প্রাসাদ, কারন কারবালায় তার লাল রক্ত ঝরেছে আর ইমাম হোসেন (রাঃ) এর জন্য সবুজ পান্না পাথরের প্রাসাদ, কারন বিষ পানে তার শরীর সবুজ হয়ে ছিল। ফেরেস্তাদের মসজিদ “বাইতুল মামুর”ও তৈরি হয়েছে মূল্যবান রত্ন পাথর দিয়ে। ষষ্ঠ আসমান আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন রত্ন পাথর দিয়ে। হযরত আদম (আঃ) কে বেহেস্ত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়ার সময় তাকে প্রথম শ্রীলঙ্কায় নামানো হয়। যার পায়ের ছাপ এখনো শ্রীলঙ্কায় রত্নপুরা নামক পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে। আর আদম (আঃ) এর পায়ের ছোঁয়াতে শ্রীলঙ্কার মাটির ৯৫ ভাগই নানান রত্ন পাথরের ভরে যায়। তাই তো পৃথিবীর ভালো ভালো মানের পাথর গুলো আসে শ্রীলঙ্কা থেকে।

আল্লাহ্‌ মানুষকে সুস্থ করার জন্য ওষুধের মধ্যে ক্ষমতা দিয়েছেন, মাটির মধ্যে বিভিন্ন রঙ বে রঙের রত্ন পাথর সৃষ্টি করেছেন তার নেয়ামত হিসেবে। পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই আল্লাহর নেয়ামত। মানুষ যেমন সুস্থ থাকার জন্য ওষুধ খেতে পারে কিন্তু সুস্থতার জন্য ভরসা করতে হয় আল্লাহ্‌ উপর, ঠিক সেই ভাবে মানুষ আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করে শারীরিক, মানুষিক ও জীবন ধারায় উন্নতির জন্য রত্ন পাথর ব্যবহার করতে পারে বিনা দ্বিধায়। কিন্তু কেও যদি বিশ্বাস করে যে এই পাথর তার উপকার করে দেবে অথবা পাথরের ভাগ্য বদলানোর ক্ষমতা আছে তাহলে তিনি ভুল করছেন, বোকামি করছেন, আর সব থেকে বড় করছেন গুনাহ। কারন ইসলাম ধর্মে কোথাও উল্লেখ নেই যে পাথর ব্যবহারে মানুষের ভাগ্য বদলায়। ওষুধ খেলেও মানুষ মারা যায়, আবার পাথর ব্যবহার করলেও কোন উপকার পাওয়া নাও যেতে পারে। সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহ্‌র ইচ্ছা এবং ক্ষমতা। বরং আমরা মানুষ নির্দিষ্ট কোন উপকারের আশা করে রত্ন পাথর ব্যবহার করি যা বোকামি, আল্লাহ্‌র নেয়ামত মানুষের কতটা উপকার করবে সেটা তো আল্লাহ্‌ ছাড়া কেও বলতে পারেনা। তাই কোন প্রকারের ভবিষ্যৎ না যেনে ভাগ্য গণনা না করে শুধু মাত্র সমস্যার বিচার করে আল্লাহ্‌র উপর পূর্ণ ভরসা রেখে উপকারের আশায় তার নেয়ামত রত্নপাথর ব্যবহার করা কোন গুনাহ হতে পারেনা বলেই বিশ্বাস।

বিভিন্ন প্রকার রত্ন পাথরের জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে পাওয়া উপকার জানতে ভিজিট করুনঃ Benefits of Gemstone (রত্ন পাথরের উপকারিতা)