এমন একটি বিষয়ের ব্যাখ্যা দেবার আগে ছোট একটি বাস্তব ঘটনা শেয়ার করে নেই। দুবাই প্রবাসী আমাদের এক ক্লায়েন্ট তার ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের থেকে একটি পোখরাজ পাথর ক্রয় করে দুবাই নিয়ে যান। যেহেতু আমাদের প্রতিটা আসল পাথরের সাথে থাকে বাকি জীবনে কোন ভাবে নকল প্রমাণে সম্পূর্ণ লিখিত মূল্য ফেরত গ্যারান্টি, তাই পাথরটি বিক্রি করার কিছু দিন পরে আমাদের ঐ ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করার পরে তিনি খুব হতাশা প্রকাশ করেন। আমি সম্পূর্ণ বিষয়টা তার কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলে আমাদের পাথরটি ভালো না। আমি শুনে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম যে তিনি কি ভাবে জানতে পারলেন আমাদের দেওয়া পোখরাজ পাথরটি ভালো নয় এবং নকল। তখন তিনি জানালেন যে, দুবাইতে পাথর পরীক্ষা করার মেশিন রয়েছে এবং তিনি সেখান থেকে পাথরটি পরীক্ষা করে জানতে পেরেছেন যে পাথরটি ৯-১০ নম্বর গ্রেডের পাথর। আমাদের দেওয়া পাথরটি নাকি ১-২ নম্বর গ্রেডের পাথর নয়। এমন কথা শোনার পর তাকে আমি সর্ব প্রথম একটি মেশিনের ছবি দেখালাম। যে মেশিনটার নাম “Diamond Selector”। তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে তাকে এ মেশিন দিয়ে কি তার পোখরাজ পাথরটি পরীক্ষা করে গ্রেডিং করা হয়েছে? তিনি আমাকে উত্তর বললেন হ্যাঁ।
এমন উত্তর শুনে তাকে আমি একটা চার্ট দেখালাম। যেখানে মেশিনে মাপার পরে কোন আসল পাথরের হার্ডনেস (Hardness) কত সেটা দেওয়া আছে। কারন এক একটি রাশি রত্ন পাথর একেক ধরনের শক্ত হয়ে থাকে। তার মধ্যে হীরা হচ্ছে সব থেকে শক্ত, যার হার্ডনেস হচ্ছে দশে দশ। এর পরেই হচ্ছে নীলা, রুবি ও পোখরাজ পাথর। যার হার্ড নেস হচ্ছে নয়। তারমানে এই যে আমাদের আসল পোখরাজ পাথরটি মেশিনের হার্ডনেস টেস্টে নয়ের মধ্যে নয় পাওয়ার পরে সেই দোকানী ভালো রেজাল্টকে তার কাছে ঠিক উল্টো করে বলেছেন। এবং তিনি দেখিয়েছেন যে আমাদের পাথরটির গ্রেড ৯। মানে একেবারে খারাপ পাথর। এর একটাই কারন আর তা হল আমার ক্লায়েন্ট তার কাছ থেকে কেন পোখরাজ পাথরটি ক্রয় করেন নাই। সকল কিছু জানার পরে আমার ক্লায়েন্ট তার ভুল বুঝতে পারে এবং দুঃখ প্রকাশ করেন।
তাহলে কি আসলেই মেশিন দিয়ে পাথরের গ্রেডিং করা যায়? যদি এক কথায় বলতে হয়, তাহলে উত্তর হচ্ছে “না”। পৃথিবীর এমন কোন মেশিন নেই যে মেশিনটি রত্ন পাথরকে পরীক্ষা করে বলে দেবে পাথরটি আসল অথবা নকল অথবা পাথরটির গ্রেড কেমন। তবে হ্যাঁ, বর্তমান আধুনিক যুগে বেশ কিছু ভালো মেশিন পাওয়া যায় যে গুলো রত্ন পাথরের বিভিন্ন দিক পরীক্ষা করে রেজাল্ট দিতে পারে। এসকল মেশিন গুলোর মধ্যে …
Gem Reflectometer: যা দিয়ে পাথরের মাঝে আলোর পরলে তা কিভাবে পাথর ভেদ করে বেড় হয় তা মাপা যায়।
Presidium Gems Tester & Diamond Selector: এ দুটি মেশিন দিয়ে সাধারণত পাথরের হার্ডনেস কত সেটা মাপা যায়।
Specific Gravity Kits: এ মেশিন একটি রত্ন পাথরের মধ্যাকর্ষ কতটা তার পরিমাপ করা হয়।
Polariscope: এর দ্বারা পাথরের মাঝে আলোর প্রভাব দেখা যায়।
এ সব গুলো মেশিনের রেজাল্টের আবার পাথর ভেদে নির্দিষ্ট একটি চার্ট রয়েছে। ফলে মেশিনের রেজাল্টের সাথে চার্ট মিলিয়ে সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এত সব মেশিনে পরীক্ষা করার পরে একজন রত্নপাথর বিশেষজ্ঞ তার খালি চোখ দিয়ে পাথরটি পরীক্ষা করে যদি আসল বলে মনে হয় তাহলেই রত্ন পাথরটি আসল।
Presidium Gems Tester & Diamond Selector এ দুটি মেশিন সারা পৃথিবীতে সব থেকে বেশী ব্যবহার হয়ে থাকে। এ মেশিন দুটো শুধু মত্রই পাথরটি কতটা শক্ত না নির্ণয় করে। কোন ভাবেই আসল নকল নির্ণয় করতে পারেনা। বর্তমানে নকল পাথর এত নিখুত ভাবে বানানো হয় যে আসল পাথরের মত শুধু দেখতেই নয় এর চরিত্রও মিলে যায়। অনেক সময় নকল পাথরের হার্ডনেস আসল পাথরের থেকেও বেশী হয়ে যায়। তখন হার্ডনেস মাপার মেশিন দিয়ে টেস্ট করলে নকল পাথরকেও আসল পাথরের নম্বর দিয়ে দেয়। আর কিছু অসাধু মানুষ এ মেশিন গুলোর হার্ডনেস ক্লায়েন্টকে দেখিয়ে তাদের ইচ্ছে মত করে বুঝিয়ে দিয়ে থাকে। সৃষ্টি হয় প্রতারনার। কেও এই মেশিন দুটি দেখিয়ে বলার চেষ্টা করেন পাথরটি আসল অথবা পাথরটি গ্রেডিং ভালো অথবা পাথরের ক্ষমতা বেশী। এমন সব কথা শুনে আমরা বিশ্বাস করে ফেলি এবং প্রতারিত হই।
প্রকৃত পক্ষে বলতে সারা পৃথিবীতে এমন কোন মেশিন নেই যা দিয়ে সরাসরি কোন পাথর আসল না নকল তা বেড় করা যায়। বিভিন্ন দিক বিভিন্ন মেশিনের সাহায্যে পরীক্ষা করে তার সাথে চোখে দেখার ফল মিলিয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় যে পাথরটি আসল অথবা নকল। তাই এমন কোন মেশিনের রেজাল্ট দেখে ভুল বুঝে প্রতারিত হবেন না বলেই আমাদের আশা।